নগরবাসীর স্বাস্থ্য (আরবান হেলথ)

দ্রুত নগরায়ন, শিল্পায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং অসংক্রামক ব্যধির প্রয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে সামাজিক ও জনমিতিক পরিবর্তন ঘটছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ২৭% জনসংখ্যার বসতি শহর এলাকায় এবং প্রতিনিয়তই এ হার বাড়ছে। শহরে যত মানুষ বাস করে তার ৪০% ঢাকায়, ২৯% অন্যান্য বিভাগীয় শহরে এবং ৩১% অন্য সকল পৌরসভায়। ঢাকাসহ অন্যান্য বড় নগরীতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং যার বেশীরভাগেরই আশ্রয়স্থল বস্তিতে হওয়ায় এটি স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান আইন ও নীতিমালায় নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। বিশেষত: প্রতিরোধ ও সীমিত নিরাময় সেবা, কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবলসহ সম্পদের অপ্রতুলতার কারনে এটি তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া বেসরকারী যে সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে তারা নিরাময় ও বিশেষায়িত সেবা প্রদান করছে কিন্তু রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে তারা উৎসাহী নয়।

অপরদিকে শহর/নগরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে মধ্যমিক ও শীর্ষ পর্যায়ের হাসপাতাল-মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল রযেছে-কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও সেবার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত-বিশেষত: বস্তিবাসী এবং ভ্রাম্যমান দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার (ইউপিএইচসি) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার নগর /শহরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেছে। প্রকল্পের বাইরের শহর বাসীদের স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়াধীন প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।

অধিকন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন ৩৫ টি আরবান ডিসপেনসারীর মাধ্যমে ইপিআই, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবাসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সিবিএইচসি অপারেশনাল প্লানের আওতায় নগরবাসীর স্বাস্থ্য (আরবান হেলথ) জোরদারকরণের কিছু উদ্যোগ সন্নিবেশিত আছে।

উদ্দেশ্য

  • । বস্তিবাসী / শিল্পকারখানা কর্মী / ভ্রাম্যমান জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা সেবা প্রদান।
    • কার্যকরী ও মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আরবান ডিসপেনসারীগুলিকে শক্তিশালীকরণ।
    • বস্তিবাসী / শিল্পকারখানা কর্মী / ভ্রাম্যমান জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য নিয়মিত বিরতিতে স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনা করা।
  • ২। বস্তিবাসী / শিল্পকারখানা কর্মী / ভ্রাম্যমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
    • বস্তিবাসী/শিল্পকারখানা কর্মীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
  • ৩। নির্ধারিত এলাকায় বিদ্যমান স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও সুবিধাসমূহ সম্পর্কে জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
    • উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সমপর্যায়ের ব্যবস্থাপকগন সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা মেয়র ও তার স্বাস্থ্য কর্মীদের বিদ্যমান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণলয়াধীন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সমূহ, বেসরকারী সংগঠন ও ব্যক্তি পরিচালিত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মানচিত্র তৈরীতে সহায়ক করা।
    • তারপর প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক বিনামূল্যে প্রদেয় অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজের জন্য এলাকা নির্ধারণ।
    • বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা নীতিমালা পুন:বিবেচনা করতে হবে।
    • বিদ্যমান স্থানীয় স্বাস্থ্য স্থাপনা এবং সেবাদির জন্য আইইসি ও বিসিসি সামগ্রী প্রনয়ন ও বিতরন।
  • ৪। চেষ্ট ক্লিনিক ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল শক্তিশালীকরন :
    • বিদ্যমান চেষ্ট ক্লিনিক ও সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালের অবস্থান বিষয়ে একটি সার্ভে পরিচালনা করতে হবে।
    • বর্নিত প্রতিষ্ঠান সমূহের উন্নয়নের নিমিত্তে কর্মশালার আয়োজন করতে হবে।
    • ঐ সকল প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, কম্পিউটার ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
    • তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং জোরদারকরণ।
  • ৫। স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় জোরদারকরণ।
    • সরকারী, বেসরকারী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নগর স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে এ্যাডভোকেসী সভার আয়োজন করতে হবে।
    • স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে নগর স্বাস্থ্য উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কৌশল প্রনয়নের জন্য ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজন করা।
সর্বশেষ আপডেট: 2019-05-14 10:05:19